যাহারা বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবছেন তাহারা হয়ত জানেন না কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন। অনেকে হয়ত অভিজ্ঞদের সাথে পরাপর্শ করে থাকেন। তবে মাথায় রাখবেন পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই আপনি সফলভাবে করতে পারবেন না। সেটা যায় হোক না কেন। আর বিসিএস এর ক্ষেত্রে তো কোন কথাই নেই।
আসুন তাহলে মূল আলোচনায় ফেরা যাক। আপনি যদি গ্রাজুয়েশন (স্নাতক) শেষ করে থাকেন সেক্ষেত্রে এখন থেকেই মূল প্রস্তৃতি নেওয়া শুরু করুন। তবে আপনাকে একটা রুটিন ওয়াইজ, সঠিক গাইডলাইন মেনে, এবং নির্দিষ্ট বইসহ যেসমস্ত নিয়ম ফলো করতে পারেন। একটি একজন সফল ব্যক্তির জীবনালাপ সহ আমার ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরব।
আপনার দৈনিক কতটুকু সময় পড়াশোনা করা দরকার
একজন বিসিএস প্রার্থী হিসেবে আপনাকে দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করা দরকার। তবে, এক্ষেত্রে আমি রাত ১০টা থেকে শুরু টানা ৩ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। পরের কিছুক্ষণ আরাম করতাম। তারপর রাত ২টা থেকে পড়া শুরু করতাম ফজরের আজান না হওয়া পর্যন্ত। নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত পড়তাম। তারপর ঘুমের রাজ্যে চলে যেতাম।
এতকিছু বলার কারণ হলো, কেউ রাতে পড়াশোনা করতে আরামদায়ক মনে করে। আবার কেউ দিনে পড়াশোনা করতে আরামদায়ক বোধ করে। যে সময় পড়েন না কেন, দৈনিক কতঘণ্টা পড়াশোনা করতেছেন এটা বড় কথা।
সাবজেক্ট ভিত্তিক কি কি বই পড়বেন
আপনাকে প্রতিটি সাবজেক্ট ধরে ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে কোন বিষয়ে দুর্বল হলে অবশ্যই আপনি সেই সাবজেক্ট এর বেসিক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লিয়ার করবেন। আমি প্রতিটি সাবজেক্টকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পড়াশোনা করেছি।
[পরামর্শ: আপনি যে বিষয়ে অনার্স করছেন কিংবা ভাল পারেন। তবে অতি উৎসাহি হয়ে সে বিষয়ে সহজ বলে মনে করে স্কিপ করবেন না।]
বাংলার জন্য যে বই পড়া দরকার
বাংলায় মোট ৩৫ নম্বর। তবে এইক্ষেত্রে ভাল করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই (ব্যাকরণ) পড়তে হবে। অতপর নিচের দুটি বই দেখতে পারেন।
১. নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ
২. অগ্রদূত (বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্যের জন্য)
[আমার পরামর্শ: মনে রাখবেন, বাংলায় ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং বিরচন প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ।]
ইংরেজির জন্য যে বই পড়া দরকার
ইংরেজিতে মোট ৩৫ নম্বর। তবে এইক্ষেত্রে ভাল করার জন্য আপনাকে অবশ্যই Master English – মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর বইটি পড়তে পারেন। অতপর নিচের তিনটি বই দেখতে পারেন।
১. The Comparative Exam
২. Smart Vocabulary
৩. A Handbook on English Literature
(পরামর্শ: তবে ইংরেজিতে আপনার বেসিক ভাল হতেই হবে। প্রিলিমীনারি কোন রককম পাশ করলেন কিন্তু লিখিত পরিক্ষাতেও আপনাকে ইংরেজিতে পাশ করা লাগবে। সেজন্য ইংরেজিতে পেপার পড়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া অন্য কোন বই প্রয়োজন নেই।)
সাধারণ জ্ঞান জন্য যে বই পড়া দরকার
প্রিলি পাশের অন্যতম হাতিয়ার সাধারন জ্ঞানের ৫০ নম্বর। যারা এই অংশে যত ভাল করেন তাদের জন্য প্রিলি পাশ করা তত সহজ। এই অংশে ভাল করার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত এই অংশটাকে দেখতে হবে। তবে আপনি এই বইগুলো দেখতে পারেন।
১. জর্জ MP3 (বাংলাদেশ + আন্তর্জাতিক)
২. প্রিসেপটর্স সাম্প্রতিক হাইলাইটস
৩. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
আমি নিয়মিত দৈনিক পেপার পড়তাম। পাশাপাশি বইগুলো পড়লেই যথেষ্ট।
[পরামর্শ: মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, ও বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি সহ সরকার ব্যবস্থা, অর্থনীতি, ইত্যাদি নোট করে পড়বেন। পাশাপাশি দৈনিক পেপার পড়ুন। লিখিত পরিক্ষায় যথেষ্ট ভাল ফলাফলে সহায়তা করবে।]
ভূগোলের জন্য যে বই পড়া দরকার
এখানেও ১০ মার্ক কম না কিন্তু। তবে আমি ভূগোলের জন্য কোন গাইড পড়ি নাই। বোর্ড বই পড়েছি।
[পরামর্শ: সহায়ক হিসেবে বেসিক ভিউ বইটি পড়তে পারেন।]
নৈতিকতা ও সুশাসন (ভূগোল এর অনুরূপ): ১০
নবম-দশম বা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন বইটা পড়েছি।
কম্পিউটার জন্য যে বই পড়া দরকার:
আপনি ছোট বেলা থেকেই এটা নিয়ে পড়ে আছি। তাই এই ১৫ নম্বর আমার জন্য তুলনামূলক ভাবে অন্যান্যদের চেয়ে সহজ। তাই আমি নিজে প্রাকটিক্যালি জিনিজটাকে ওন করি পাশাপাশি বই হিসাবে এটি পড়েছি।
১. ইজি কম্পিউটার
[পরামর্শ: এই বইটা ভালোভাবে পড়লেই হবে। তবে ভুলেও শর্টকাট পড়বেন না।]
গণিত জন্য যে বই পড়া দরকার
এখানে স্কিপ করার কোন সুযোগ নেই। ১৫ মার্ক বলে কিছু নেই রিটেনেও ম্যাথ আছে। তাই নিয়মিত চর্চার বিকল্প নেই। এই জন্য আপনি প্রথমে অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বোর্ড বইটা পড়ুন। তারপর খাইরুলস এর বইটা পড়তে পারেন।
১. নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই
২. খাইরুল’স বেসিক ম্যাথ বই
আমি ম্যাথে টিউশনি করিয়েছি পাশাপাশি কোচিং এ থাকাকালীন অনেকের ই ম্যাথ বুঝতে সমস্যা হলে আমার কাছে নিয়ে আসতো। আমি চেষ্টা করতাম অংকগুলো করে দেওয়ার। এছাড়া কোন ম্যাথ বুঝতে সমস্যা হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে দেখতাম।
মানসিক দক্ষতা: ১৫ নম্বর
১. জর্জ/খাইরুল’স মানসিক দক্ষতা
বিজ্ঞান: ১৫ নম্বর
১. ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বই
২. MP3 দৈনন্দিন বিজ্ঞান
আমি বিজ্ঞানে খুবই দূর্বল। সেজন্য, প্রথমে ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বই ভালোভাবে পড়েছিলাম।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য কি কোচিং দরকার
অনেকে চাকরি পাওয়ার পর বলে থাকেন। কোচিং করার দরকার নাই নিজে নিজে পড়া ভাল। কিন্তু আমি বলব আপনি অবশ্যই এ জার্নিতে নতুন হয়ে থাকলে কোচিং অবশ্যই করবেন। তবে এক্ষেত্রে বিসিএস কনফিডেন্স, ওরাকল যথেষ্ট ভাল। এবং এখানে অনুষ্ঠিত সকল পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এতে করে আপনার কনফিডেন্স আরও বেড়ে যাবে।
বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে ক্যাডারদের অভিজ্ঞতা
আপনার প্রস্তুতি যখন একবার সম্পন্ন হয়ে যাবে তবে দেখবেন অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষাগুলো আপনি টিকে যাচ্ছেন। এখানে দেওয়া বইগুলো ভালভাবে রপ্ত করতে পারলে ব্যাংকের জন্য কিংবা পিএসসি নন ক্যাডার কিংবা প্রাইমারির জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে না। একবার প্রস্তৃতি নেওয়া হয়ে গেলে আপনি অটোমিটেক নিয়োগ পরিক্ষাগুলোতে টিকা শুরু করবেন। নিচে একজনের অভিজ্ঞতা দেখানে হলো।
আমি নিশাত তাসনীম বিসিএস এর জন্য ২ বছর যাবৎ লেগে আছি: যার ফলশ্রুতিতে আমি ৪৪তম বিসিএস – লিখিত পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছি। এবং ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছি। এই বছর প্রাইমারিতে চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু এখনও জয়েন করিনি। ১৭তম নিবন্ধন – কলেজ এবং উচ্চবিদ্যালয়ে চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ। সর্বশেষ সম্বন্বিত ব্যাংকও ভাইভা দিলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি মনে করি বিসিএস হলো চাকরিতে নিয়োগ লাভের বড় সেক্টর বিসিএস।
শেষকথা
বিসিএস জার্নিতে মোটকথা আপনাকে লেগে থাকতে হবে। প্রথমবার যদি প্রিলি পরীক্ষায় পাশ না করেন দ্বিতীয়বার চেষ্টা করুন। আমি তৃতীয়বার প্রিলি পাশ করি এবং সেই বারই লিখিত পাশ করি। আপনার মঙ্গল কামনায় আল্লাহ হাফেজ।
One Comment