গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কত পেলে চান্স হয়?

এই প্রশ্নটা যেন হাজারো শিক্ষার্থীর মনের এক কোণে সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে, তাই না? “গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কত পেলে চান্স হয়?”  এই একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলেই মনে হয় যেন অর্ধেক যুদ্ধ জিতে যাওয়া যায়! বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির এই রণাঙ্গনে, গুচ্ছ পদ্ধতিটা অনেকের কাছেই একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে, শুধু পাস মার্ক পেলেই কি সব হয়ে যায়? না বন্ধু, খেলাটা আরও গভীরে।

আমি জানি, তোমরা অনেকেই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছো। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবো, কোন বিষয়ে পড়তে পারবো এসব নিয়ে মাথায় নানা প্রশ্ন ভিড় করছে। চলো, আজ আমরা এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আদ্যোপান্ত জেনে নিই। আমি তোমার সেই বন্ধু, যে একদম সহজ করে সব বুঝিয়ে দেবে, যাতে তোমার মনে আর কোনো দ্বিধা না থাকে।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তোমাদের মনে যে প্রশ্নগুলো সবচেয়ে বেশি আসে, সেগুলোর উত্তর চলো একদম সহজভাবে জেনে নিই। কারণ সঠিক তথ্য জানলে প্রস্তুতিটা আরও গোছানো হয়, তাই না?

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে কত নম্বর লাগে?

 

প্রথমেই বলি, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক হলো ১০০ এর মধ্যে মাত্র ৩০ নম্বর। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছো, মাত্র ৩০! কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, শুধু পাস করলেই যে তোমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা পছন্দের বিষয়ে চান্স নিশ্চিত, তা কিন্তু নয়। এটা শুধু তোমাকে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার যোগ্যতা এনে দেবে। আসল খেলাটা শুরু হয় এরপর! তাই ৩০ পেয়ে আত্মহারা হয়ে যেও না।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কত মার্ক পেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়?

 

এই প্রশ্নটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! কত পেলে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যায়, সেটা নির্ভর করে বেশ কিছু ফ্যাক্টরের উপর—যেমন ওই বছরের প্রশ্ন কেমন ছিল, কতজন পরীক্ষা দিয়েছে, আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়ের জন্য তুমি আবেদন করছো। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান) এর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়:

প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীর সংখ্যা (প্রায়) চান্সের সম্ভাবনা
৭০-৮৫+ ৫০০ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিত চান্স
৬৫+ ১,০০০ খুবই ভালো সুযোগ
৬০+ ৩,০০০ বেশ ভালো সুযোগ
৫৫+ ৬,০০০ মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সুযোগ
৫০+ ১৪,৪০০ চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা আছে
৪৫+ ২৩,০০০ অপেক্ষমাণ তালিকায় সুযোগ

তুমি যদি প্রথম মেরিটে ১-১১,৫০০ পর্যন্ত পজিশনে থাকো, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারো যে তোমার একটা ভালো জায়গায় চান্স হবে। দ্বিতীয় মেরিটে ১৫,০০০ পর্যন্ত আর তৃতীয়-চতুর্থ মেরিটে ১৮,০০০-২০,০০০ পর্যন্ত পজিশনেও চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এখানে একটা ছোট টুইস্ট আছে, সেটা হলো তোমার দেওয়া সাবজেক্ট চয়েস! অনেক সময় ভালো মার্ক পেয়েও ভুল চয়েসের কারণে পছন্দের সাবজেক্টে চান্স হয় না।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্য ন্যূনতম জিপিএ কত লাগে?

 

আবেদনের জন্য ন্যূনতম জিপিএ একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য যোগ্যতাগুলো একটু দেখে নাও:

  • এ ইউনিট (বিজ্ঞান): এসএসসি ও এইচএসসি উভয়েই ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে, আর দুটো মিলে মোট জিপিএ হতে হবে ৭.৫০ (আগে এটা ৮.০০ ছিল, এবার একটু শিথিল হয়েছে, যা তোমাদের জন্য সুখবর!)।
  • বি ইউনিট (মানবিক): এসএসসি ও এইচএসসি উভয়েই ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে, আর দুটো মিলে মোট জিপিএ ৬.০০ হতে হবে।
  • সি ইউনিট (বাণিজ্য): এসএসসি ও এইচএসসি উভয়েই ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে, আর দুটো মিলে মোট জিপিএ ৬.৫০ হতে হবে।

এই জিপিএগুলো না থাকলে কিন্তু তুমি আবেদনই করতে পারবে না। তাই আগে নিশ্চিত হও, তোমার জিপিএ ঠিক আছে কিনা!

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং আছে কি?

 

হ্যাঁ, অবশ্যই আছে! আর এটা একটা বড় ফ্যাক্টর, যা অনেক সময় তোমার মেধা তালিকায় অবস্থানকে পাল্টে দিতে পারে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যায়। ভাবো তো, যদি ৪টা উত্তর ভুল হয়, তাহলে তোমার ১ নম্বর এমনিতেই কমে যাবে! তাই আন্দাজে উত্তর দেওয়ার আগে দু’বার ভাবো। নেগেটিভ মার্কিং এর ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে সঠিক উত্তর দেওয়াটা খুব জরুরি।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কতটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে?

 

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে মোট ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদিও একসময় ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, কিন্তু এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এই ১৯টা বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন একসাথে গুচ্ছের ছাতার নিচে আছে।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মোট আসন সংখ্যা কত?

 

আসন সংখ্যা নিয়ে সবারই একটা কৌতুহল থাকে। ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান (এ ইউনিট), মানবিক (বি ইউনিট) ও বাণিজ্য (সি ইউনিট) মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১৬,০০০-১৭,০০০। এর মধ্যে শুধু ‘এ’ ইউনিটেই প্রায় ৮,২৯৭টি আসন রয়েছে। তবে আসন সংখ্যা প্রতি বছরই সামান্য এদিক-ওদিক হতে পারে, তাই সার্কুলারটা ভালো করে দেখে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কত?

 

আবেদন ফি নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্য তোমাকে ১,৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। যদি তুমি আর্কিটেকচার বিভাগে ভর্তি হতে চাও এবং ব্যবহারিক (ড্রয়িং) পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়, তাহলে এর জন্য আরও ৫০০ টাকা অতিরিক্ত লাগবে। এই ফি একবার জমা দিলে আর ফেরত পাওয়া যায় না।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস কী?

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সাধারণত এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ীই করা হয়। তাই এইচএসসিতে যা পড়েছো, সেটাই তোমার মূল হাতিয়ার। চলো, মানবন্টনটা একটু দেখে নিই, যা তোমাকে প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে:

এ ইউনিট (বিজ্ঞান):

  • পদার্থবিজ্ঞান: ২৫ নম্বর (আবশ্যিক)
  • রসায়ন: ২৫ নম্বর (আবশ্যিক)
  • গণিত/জীববিজ্ঞান: ২৫ নম্বর (যেকোনো একটি, তোমার পছন্দ অনুযায়ী)
  • বাংলা/ইংরেজি: ২৫ নম্বর (ঐচ্ছিক হিসেবে, যেকোনো একটি বেছে নিতে পারো)

বি ইউনিট (মানবিক):

  • বাংলা: ৩৫ নম্বর
  • ইংরেজি: ৩৫ নম্বর
  • সাধারণ জ্ঞান: ৩০ নম্বর

সি ইউনিট (বাণিজ্য):

  • হিসাববিজ্ঞান: ৩৫ নম্বর
  • ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা: ৩৫ নম্বর
  • বাংলা: ১৫ নম্বর
  • ইংরেজি: ১৫ নম্বর

এই মানবন্টনটা বুঝে নিলে তোমার প্রস্তুতি অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। কোন বিষয়ে কতটা জোর দেবে, সেটা তুমি নিজেই ঠিক করে নিতে পারবে।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পর সাবজেক্ট চয়েস কীভাবে দিতে হয়?

 

পরীক্ষা শেষ, ফলাফলও হাতে চলে এসেছে। এখন আসে আসল চ্যালেঞ্জ – সাবজেক্ট চয়েস। এটাই কিন্তু তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন কেমন হবে, তার একটা বড় অংশ নির্ধারণ করে! ফলাফল প্রকাশের পর gstadmission.ac.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে তোমাকে তোমার পছন্দক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ নির্বাচন করতে হবে। এটা একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে তোমাকে অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তোমার মেধা ক্রম এবং দেওয়া পছন্দক্রমের ভিত্তিতে প্রাথমিক ভর্তি সম্পন্ন হবে। যদি প্রথম মেরিটে তোমার পছন্দের সাবজেক্ট না আসে, চিন্তার কিছু নেই! আসন শূন্য থাকলে সর্বোচ্চ চারবার পর্যন্ত অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি নেওয়া হয়। তাই ধৈর্য ধরো এবং পছন্দের তালিকাটা বুদ্ধি করে সাজাও।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কোটা সুবিধা আছে কি?

 

হ্যাঁ, অবশ্যই আছে! গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের কোটা সুবিধা চালু আছে, যা কিছু শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। যেমন:

  • মুক্তিযোদ্ধা কোটা
  • ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা
  • প্রতিবন্ধী কোটা
  • উপজাতি কোটা
  • প্রবাসী কোটা

যদি তোমার কোটা সুবিধা থাকে, তাহলে অবশ্যই তা ব্যবহার করো। কোটার ভেরিফিকেশনের জন্য তুমি তোমার নিকটবর্তী যেকোনো গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারো। এটা তোমার জন্য একটা বাড়তি সুবিধা হতে পারে।

সারসংক্ষেপ

তো বন্ধুরা, আজ আমরা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক কথাই জানলাম। আশা করি, “গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কত পেলে চান্স হয়?”—এই প্রশ্নটার একটা স্পষ্ট উত্তর তুমি পেয়ে গেছো। শুধু ৩০ নম্বর পেয়ে পাস করলেই হবে না, বরং ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে চান্স পেতে হলে তোমাকে ৪৫ থেকে ৮৫ নম্বরের মধ্যে একটা স্কোর করার টার্গেট রাখতে হবে।

মনে রেখো, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিটা তোমাদের জন্য সময়, অর্থ আর শ্রম সাশ্রয়ের একটা চমৎকার সুযোগ। ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হওয়ার সুযোগ, এটা একটা দারুণ ব্যাপার, তাই না? সঠিক জিপিএ, নেগেটিভ মার্কিং সম্পর্কে সচেতনতা, আর সাবধানে সাবজেক্ট চয়েস – এই তিন মন্ত্র মনে রাখলে তোমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে।

তোমার কি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আরও কোনো প্রশ্ন আছে? নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাও! আমি আছি তোমার পাশে, যেকোনো জিজ্ঞাসা নিয়ে। তোমার মতামত আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top